বঙ্গবন্ধু টানেল : উন্নয়নের অংশীদার চীন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম আন্ডারওয়াটার রিভার ক্রসিং, কাজ প্রায় সম্পূর্ণ এবং 2023 সালের মার্চ মাসে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এই সুড়ঙ্গটি কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে বিশেষত, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলাকে শহরাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করবে। এই সুড়ঙ্গ মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হবে। মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন রোড প্রকল্পকে বিবেচনায় নিয়ে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল। দেশের পর্যটনের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান কক্সবাজারের দূরত্ব কমিয়ে দেবে বঙ্গবন্ধু টানেল। একদা স্বপ্ন থাকলেও তা এখন বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে।
সুড়ঙ্গটির মূল দৈর্ঘ্য ৩.৪৩ কিলোমিটার হলেও এর সঙ্গে ৫ কিলোমিটারের বেশি সংযোগ সড়ক যুক্ত হবে। এ টানেলে সংযুক্ত হবে চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড। চট্টগ্রাম শহরপ্রান্তের নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হওয়া এ টানেল নদীর দক্ষিণ পাড়ের সিইউএফএল (চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড) এবং কাফকো (কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড) কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে। কর্ণফুলীর মধ্যভাগে বঙ্গবন্ধু টানেল যাবে ১৫০ ফুট গভীরে। দুটি টিউবের একটি দিয়ে যানবাহন যাবে এবং আরেকটি দিয়ে ফিরবে। প্রতিটি টিউব হবে দুই লেনের, অর্থাৎ দুই টিউব মিলে চার লেনের সুড়ঙ্গপথ তৈরি হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, বঙ্গবন্ধু টানেলের জন্য থাকবে সার্বক্ষণিক বিদ্যুত ব্যবস্থা। সে কারণে তৈরি করা হচ্ছে ৩৩ কেভির দুটি নিজস্ব সাবস্টেশন ও সঞ্চালন লাইন। জরুরী প্রয়োজনে যেন এক টিউব থেকে অন্য টিউবে যাওয়া যায় সে জন্য তিনটি স্থানে থাকবে সংযোগ ব্যবস্থা। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। সুড়ঙ্গ নির্মাণে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং এর ঢাকা সফরে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি ঋণ হিসাবে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাকি অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকার করছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) কর্ণফুলী টানেলের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের (ওঅ্যান্ডএম) জন্য চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)’র সাথে, যারা এখন টানেল তৈরির কাজেও নিয়োজিত রয়েছে, একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে একটি বিধান সংশোধন করে যার মাধ্যমে পাঁচ বছর মেয়াদী চুক্তির 35 শতাংশ মূল্য যা টাকার অংকে প্রায় 9.84 বিলিয়ন টাকা, বিদেশী মুদ্রায় সিসিসিসি’কে প্রদান করা হবে।
কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে সোনালি ভবিষ্যতের স্বপ্নে চট্টগ্রাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে বলে মনে করছেন চট্টগ্রামবাসী। তারা বলছেন, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক অগ্রগতিসহ প্রতিটি খাতে এই টানেল যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও, টানেল নির্মিত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নতি যেমন সাধিত হবে, তেমনি বাড়বে সৌন্দর্য। কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রামকে পরিণত করবে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউনে। দু’পাড়ের এ সেতুবন্ধনে দক্ষিণ চট্টগ্রামে গড়ে উঠবে নতুন শিল্প কারখানা ও শিল্পাঞ্চল যা একই সাথে বিপুল কর্মসংস্থান তৈরি ও দেশের জিডিপির হার ০.১৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি করবে বলে আশা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
মো. সাকিব উল্লাহ সৌরভ
মাস্টার্স শিক্ষার্থী (থিসিস চলমান), ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং
শেনডং ইউনিভার্সিটি অফ ফিন্যান্স এন্ড ইকোনোমিক্স
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : [email protected]।