কেমন বাংলাদেশ চাই- ৭
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনের মাত্রই মাসকাল অতিক্রান্ত হয়েছে। এমতাবস্থায়, প্রিয় জন্মভূমিকে নিয়ে দেখি অনেক স্বপ্ন,
যেখানে সবাই সমান সুযোগ পাবে এবং আমাদের অগ্রগতির পথে যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলোর সমাধান হবে। কিছু সমস্যা এবং তাদের সমাধান আমি মনে-প্রাণে কামনা করি।
বড় মাপের সংস্কার
রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতায় আসে, তারা যাতে পূর্বের মতো লুটপাট, দুর্নীতি, গুম-খুন,
ক্ষমতার অপব্যবহার, বাক্স্বাধীনতা হরণের মতো অপরাধে আবারও জড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার, সংবিধানের সংশোধন এবং বিদ্যমান কু-নীতির বিলোপ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নিশ্চিত করতে হবে। দেশের সংবিধানে এমন পরিবর্তন আনা জরুরি,
যাতে ভবিষ্যতে কোনো স্বৈরাচারের পুনরুত্থান ঘটতে না পারে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব দূর করা
দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় প্রভাব ও লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দলমুক্ত রাখতে হবে, যাতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে। ছাত্র সংসদ থাকতে পারে,
তবে সেটি হতে হবে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিকাশের উদ্দেশ্যে, রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারের জন্য নয়।
স্বৈরশাসকদের বিচার
স্বৈরশাসক ও তাদের সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে, সেটা প্রশাসন, মিডিয়া বা অন্য কোনো খাতে হোক। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো স্বৈরশাসক বাংলাদেশে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে।
গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানো
দেশে শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বাজেট বাড়াতে হবে। আমি বসবাস করি নেদারল্যান্ডসে, ছোট্ট একটি দেশ কিন্তু কৃষি রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে, যা গবেষণা ও উন্নত প্রযুক্তির ফলাফল। বাংলাদেশের জন্যও গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; কারণ, দেশের উন্নয়নে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।
আহত ও শহিদ পরিবারকে সহায়তা
বৈষম্যহীন ছাত্র আন্দোলনে আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি। যেসব ছাত্রজনতা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন,
তাদের ও তাদের পরিবারের দীর্ঘমেয়াদি ভরণপোষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। একই সঙ্গে আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন,
তাদের পরিবার যেন রাষ্ট্রের সুরক্ষার ছায়ায় থাকে।
দুর্নীতি ও ঘুস প্রতিরোধ
দুর্নীতি আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতিটি স্তরে জড়িয়ে রয়েছে। অফিস ও আদালতে ঘুসের কালচার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। যারা ঘুস গ্রহণ করবে, তাদের কঠোর বিচারের আওতায় আনতে হবে। এজন্য আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বেকারত্ব কমানো
বেকারত্ব দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা,
বিশেষ করে তরুণদের জন্য। শিল্পায়ন ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে। কর্মমুখী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাড়াতে হবে।
পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ
পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন দেশের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। পরিবেশ রক্ষায় কড়া আইন প্রয়োগ করতে হবে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। পুনর্বনায়ন কর্মসূচি এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিতে হবে।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা
মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কথায় কথায় মানুষকে "ট্যাগ" দিয়ে দমন করার কালচার বন্ধ করতে হবে। এজন্য আইন করে মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার সুরক্ষিত করতে হবে।
ধর্মীয় স্বাধীনতা
ধর্ম পালনের সত্যিকারের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে,
যেখানে ইসলাম, সনাতন,
বৌদ্ধ, খ্রিষ্ট্রানসহ সকল ধর্মের মানুষ নিজেদের ধর্ম পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা উপভোগ করবে। পার্শ্ববর্তী একটি দেশের বিরূপ আচরণের কারণে গত ১৫ বছর দেশের মুসলমানগণও বৈষ্যমের স্বীকার হয়েছেন,
যেকোনো ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে যেন এটি আর ভবিষ্যতে না ঘটে।
আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুশাসিত, দুর্নীতিমুক্ত, সবুজ ও সুরক্ষিত বাংলাদেশ গড়ার জন্য একসাথে কাজ করি।
ড. রেজাউল করিম
ইমিউনোলজিস্ট, ইউত্রেখত, নেদারল্যান্ডস।
Arif
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : [email protected]।